শিলাইদহ কুঠিবাড়ি- রবীন্দ্রস্মৃতি
Writer- Mehnaz
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রবীন্দ্রস্মৃতি-বিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটনকেন্দ্র।এখানে কবি তার
উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন।এখানে বসে তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার
তরী,চিত্রা,চৈতালি সহ অনেক জনপ্রিয় গান।

শিলাইদহ কুটি বাড়ির অবস্থান
বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলাধীন পদ্মার দক্ষিণ তীরে জেলা সদর থেকে পাঁচ মাইল
উত্তরে গড়াই নদী পেরিয়ে এবং আরও উত্তরে পদ্মা নদীর অপর পাড়ের পাবনা শহরের বিপরীতে এর
অবস্থান।
শিলাইদহ কুটি বাড়ির ইতিহাস
শিলাইদহ নামটি আধুনিক, আগে এ স্থানটি খোরশেদপুর নামে পরিচিত ছিল। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে
জোঁড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার এই গ্রামটি কিনে নেওয়ার আগে এখানে একটি নীলকুঠি ছিল। শেলী নামের
একজন নীলকর এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। গড়াই এবং পদ্মা নদীর মিলিত প্রবাহের ফলে
সৃষ্ট গভীর একটি ‘দহ’ (ঘূর্ণিস্রোত) থেকে গ্রামটি শেলী-দহ নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। কালক্রমে তা
শিলাইদহ-এ পরিণত হয়।
১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইলসূত্রে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ জমিদারির
মালিক হন। রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে প্রথম শিলাইদহে আসেন ১৮৮৯ সালের
নভেম্বর মাসে।
জমিদারির দেখাশোনা করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৈশোরে এবং তার পরবর্তীকালেও মাঝে মাঝে এখানে
আসতেন এবং এই কুঠিবাড়িতেই থাকতেন। তবে পরবর্তীকালে বন্যার সময় পদ্মার ভাঙ্গনে পুরানো
কুঠিবাড়ির নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এই পুরানো কুঠিবাড়িটি ভেঙ্গে
ফেলা হয় এবং পুরানো ভবন সামগ্রী দিয়েই নতুন কুঠিবাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৯১ থেকে ১৯০১ সালের
মধ্যে একদশকেরও বেশি সময় রবীন্দ্রনাথ অনিয়মিত এখানে অবস্থান করতেন।
কুটি বাড়ির কক্ষ ১৮ টির মধ্যে ১৮ টি দরজা ও৪৮ টি জানালা আছে।বাড়ির ভেতরে বিশ্বকবির
ব্যাবাহারিত পালকি নৌকা চেয়ার টেবিল কিছু দূর্লভ ছবি সব সেই সময় ব্যাবহারিত নানা জিনিস পএ
সাজানো আছে।

শিলাইদহ কুঠিবাড়ি আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য চিরসবুজ বৃক্ষের বাগান, একটি পুষ্পোদ্যান এবং দুটি
পুকুরসহ প্রায় ১১ একর মনোরম এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। শিলাইদহে রয়েছে গ্রামীণ পরিবেশ আর
মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কুঠিবাড়ি ভবনটি একটি বেষ্টনী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দক্ষিণ দিকে
অবস্থিত একটি সাধারণ অথচ আকর্ষণীয় প্রবেশ তোরণ পেরিয়ে এতে প্রবেশ করা যায়। নিচতলা ও
দোতলায় বিশাল কেন্দ্রীয় হলকক্ষসহ এতে বিভিন্ন আকারের মোট ১৫টি কক্ষ রয়েছে। নিচতলা ও
দোতলার উন্মুক্ত ব্যালকনিগুলি রানীগঞ্জ টালি দিয়ে তৈরি ঢালু ছাদ দ্বারা আংশিক আচ্ছাদিত। নিচতলার
উপরের মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে ত্রিকোণ প্রান্ত বিশিষ্ট একটি ঢালু ছাদ। দোতলার ওপরের পিরামিড
আকৃতির ছাদ ভবনটিকে আরও বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে। বর্তমানে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি সংরক্ষিত একটি
জাতীয় ইমারত। সরকারি উদ্যোগে এখানে ‘ঠাকুর স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এখন পুরো
ভবনটি জাদুঘর হিসেবে পর্যটক দের জন্য উন্মুক্ত।
শিলাইদহ কুটিবাড়ি কি ভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে শিলািইদাহ কুটি বাড়ি বাস বা ট্রেনে ২ ভাবে যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর গাবতলী
বাসস্ট্যান্ড থেকে এস,বি শ্যামলী,হানিফ ইত্যাদি এসি /নস-এসি বাস কুষ্টিয়া যাই।বাসে কুষ্টিয়ার
মজমপুর গেট এলাকায় নেমে যাবেন।সেখান থেকে অটে বা রিক্সা নিয়ে চলে যাবেন শিলাইদহ কুটি বাড়ি।
ঢাকার কুমারখালি রুটেও বেশ কিছু বাস চলাচল করে।সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্র এক্সপ্রেস,ট্রেনে যেতে
পারবেন।ট্রেনে গেলে পোড়াদহ বা ভেড়ামারা স্টেশনে নেমে যাবেন।পোড়াদহ বা ভেড়ামারা থেকে বাস বা
সিএনজি তে কুষ্টিয়া শহরে এসে,রিক্সা নিয়ে চলে যাবেন শিলাইদহ কুটি বাড়ি।
শিলাইদহ কুটি বাড়ি প্রবেশের নিয়ম
শিলাইদহ কুটি বাড়ী গ্রীষ্মকালে সকল ১০ থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।আর শীত কালে সকাল
৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকেস।মাঝ কানে দুপুর ১ টা থেকে ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ
থাকে।
শিলাইদহ কুটিবাড়ী প্রবেশের সময় জনপ্রিয় ১৫ টাকা।৫ বছরের কম বয়সীদের টিকিট লাগে না,মাধ্যমিক
পযার্য়ের শিশু কিশোরদের টিকিটের মূল্য ৫ টাকা।সর্কভুক্ত বিদেশী পর্যটকের টিকিটের মূল্য ৫০টাকা
এবং অন্যান্য বিদেশী পর্যটকদের টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা।টিকিট ব্যাতিত কাউকে প্রবেশ করতে দেয়
না।



শিলাইদহ গিয়ে কোথায় থাকবেন ও খাবেন
কুষ্টিয়া শহরের মধ্যে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল আছে।পছন্দ মতো একটাি থাকতে পারেন।হোটেল রিভার
ভিউ,হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনাল তাদের মধ্যে অন্যতম।এছাড়া এন এস রোড ও মজমপুট রোডেও বেশ কিছু
মাঝারি মানের হোটেল আছে।
তছাড়া কুষ্টিয়া শহরে মোটামুটি মানের কাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে।পছন্দ মতো যে কোনো একটাই
খেতে পারবেন। কুষ্টিয়া আসলে এখান কার কুলপি, পেয়ারা মিষ্ঠি কেয়ে দেখবেন।আর সব থেকে বিখ্যাত
হচ্ছে তিলের খাজা খেয়ে দেখবেন।
কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুটি বাড়ি ছাড়াও আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।
