দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি

Writer – QV Production

আঠারো  শতকে বাংলাদেশের নাটোরে নির্মিত মহারাজাদের বাসস্থান এই দিঘাপাতিয়া  রাজবাড়ী। বর্তমানে এটি উত্তরা গণভবন বা উত্তরাঞ্চলের গভর্নমেন্ট হাউস নামে পরিচিত। নাটোর শহর থেকে মাত্র ২.৫ কিলোমিটার দূরে দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ীটি অবস্থিত। প্রায় ৩০০ বছর পুরনো ঐতিহাসিক স্থাপনা এই দিঘাপাতিয়া  রাজবাড়ী।

দিঘাপাতিয়া  রাজবাড়ীর প্রবেশমুখে ফটকের ওপরে উভয়দিকে বিশাল আকৃতির দুটি পাথরের ঘড়ি আছে। সেসময় রাজা দয়ারাম এটি ইংল্যান্ড থেকে আনিয়েছিলেন। ঘড়ির পাশেই একটি বিরাট আকৃতির ঘন্টা রয়েছে। একসময় ঘন্টার ধ্বনি অনেক দূর থেকে শোনা যেতো বলে জানা যায়।

এক সময়ের দীঘাপাতিয়া রাজবাড়ী এখন উত্তরা গণভবন | Dighapatiya Rajbari | Uttara Gonobhaban

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলোর মধ্যে দিঘাপাতিয়া  রাজবাড়ী অন্যতম। ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে দিঘাপাতিয়া  রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা দয়ারাম রায় রাজপ্রাসাদটির মূল অংশ এবং প্রাসাদ সংলগ্ন কিছু ভবন নির্মাণ করেছিলেন। রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা, রাজা প্রমথনাথ রায়ের আমলে ১৮৯৭ সালের ১২ই জুন প্রায় ১৮ মিনিটের ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

১৮৯৭ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছর সময় ধরে সাড়ে ৪০ একর জমির উপরে এই রাজবাড়ীটি পুনঃনির্মাণ করেন রাজা প্রমথনাথ রায়। মূল প্রাসাদ ভবনের সামনে চোখে পড়বে রাজা দয়ারাম রায়ের একটি আবক্ষ মূর্তি। শোনা যায় ১৯৪৭ সালের পর আর কেউ এই রাজবাড়ীটিতে বাস করেনি। বর্তমানে দিঘাপাতিয়া  রাজবাড়ীটি নাটোর জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। একজন সাধারন রাজকর্মচারীর রাজা হয়ে ওঠার গল্প জড়িয়ে আছে এই রাজবাড়ীটিতে। 

রাজা দয়ারাম রায় একজন সাধারন রাজকর্মচারী ছিলেন। নিজকর্মগুনে এবং বিভিন্ন রাজাদের ছত্রছায়ায় রাজা দয়ারাম রায় একজন সাধারণ রাজকর্মচারী থেকে রাজা হয়ে ওঠেন।

প্রাসাদ ভবনের পেছনের অংশে দৃষ্টিনন্দন ইতালীয় গার্ডেন রয়েছে। এই ইতালীয় গার্ডেনের বিশেষত্ব হচ্ছে এখানকার সবকিছু ইতালি থেকে আনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই বাগানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।

মূল রাজপ্রাসাদ ভবনের বাইরে কুমার প্যালেস ভবনের স্থাপনাটি দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে। কুমার প্যালেসের সামনের অংশ এটি। কুমার প্যালেস মূলত একটি দ্বিতল ভবন। ভবনটির নিচের অংশ একসময় টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কুমার প্যালেসের সামনেই বড় একটি কামান রয়েছে। পুরো প্রাসাদ চত্বরে এই কামানটি সহ মোট চারটি কামান রয়েছে। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে এগুলো স্থাপন করা হয়েছিল।

এখানে একটি সংগ্রহশালা স্থাপন করা হয়েছে। এই রাজবংশের  বিভিন্ন  দলিলপত্র, ব্যবহৃত তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, যুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন  সরঞ্জাম, পান্ডুলিপি ইত্যাদি এই সংগ্রহশালায় সংগৃহীত আছে। সংগ্রহশালাটিতে প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা।

রাজপ্রাসাদ প্রাঙ্গণে পাখিদের জন্য একটি অভয়াশ্রমও তৈরি করা হয়েছে। অভয়াশ্রমটি ছাড়াও গ্রান্ডমাদারস হাউস নামে একটি ভবন রয়েছে এখানে। 

Share this article:
Previous Post: সোনারগাঁও – Sonargaon

September 24, 2022 - In Beauty, Nature, Place to go, Travel

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.